অর্জুন-সুভদ্রা সংবাদ
-শুভ্রজিৎ রায়
বহুকাল দর্শন হয়নি বাসুদেবের। চিত্ত ব্যাকুল ও বিষণ্ণ। বনবাস জীবনে যে
বিচিত্র ও বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে তা যতক্ষণ পর্যন্ত না নিবেদন করতে পারছেন সখা কৃষ্ণকে; হৃদয়ে স্বস্তি আসছে
না অর্জুনের। পশ্চিম সমুদ্রতীরের সমস্ত তীর্থ দেবালয় দর্শনই সমাপ্ত। গন্তব্য স্থির
করলেন পার্থ – প্রভাসতীর্থ,
যা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকানগরীর অত্যন্ত সন্নিকটে।
পশ্চিম উপকূল
ধরে উত্তরের দিকে অগ্রসর হয়ে অর্জুন উপস্থিত হলেন প্রভাসে। প্রবেশদ্বারের সন্নিকটে আসতেই বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে
পড়লেন পার্থ। স্মিতহাস্যে অপেক্ষারত স্বয়ং
বাসুদেব। পূর্ব সংবাদ না পাঠানো সত্ত্বেও আগমনবার্তা জ্ঞাত হয়েছেন বাসুদেব। আবারও তাঁর প্রতি এক বিস্ময়মিশ্রিত সম্ভ্রমভাবে আবিষ্ট হয়ে
পড়লেন ফাল্গুনী। বাসুদেব কি অন্তর্যামী?
অর্জুনকে প্রত্যক্ষ করেই নিবিড় আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন বাসুদেব। অর্জুন কিছু বলবার জন্য প্রয়াসী হয়েছিলেন। তাঁকে নিবৃত্ত করে বাসুদেব বললেন, “দীর্ঘ পথশ্রমে তুমি ক্লান্ত। আজ বিশ্রাম করো। বার্তালাপ আগামীকাল হবে।”
তথাপি ব্যগ্র অর্জুন সুসজ্জিত
আবাসস্থলে পাশাপাশি শয্যায় শয়ন করে বনবাসকালের কিছু বৃত্তান্ত বর্ণনা করতে
করতেই একসময় গভীর নিদ্রায় নিমজ্জিত হলেন ।
পরদিন
প্রত্যুষেই দ্বারকানগরীর অভিমুখে রওনা দিলেন কৃষ্ণার্জুন। শতসহস্র দ্বারকাবাসী
তাঁদের দর্শন লাভের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়েছেন রাজপথে।
দ্বারকানগরীতে
একদিন মাত্র অবস্থান করেই বাসুদেব অর্জুনকে নিয়ে চলে গেলেন রৈবতকে। কোনও এক পূজা ও
ব্রত উপলক্ষে এক মহোৎসব হবে রৈবতকে। সেই কারণে যাদব প্রধানরাও সস্ত্রীক ও সবান্ধব
উপস্থিত হয়েছেন রৈবতকে।
রৈবতকে
আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম, চিরবসন্ত বিরাজ করে। নয়নাভিরাম দৃশ্যপট, স্নিগ্ধ বাতাস,
সরোবর নীরে মৃদুকম্পিত শতদল, চম্পক, অশোক, নাগকেশরের বিস্তৃত সুবাস; পলাশ, তিলক ,
দেবদারুসমৃদ্ধ বনানীর শতদল সুরভিত জলাশয়ে ক্রীড়ারত বলাকা; ভ্রমরের গুনগুন আর
কোকিলের কুহুতানে যেন নন্দনকাননের সমস্ত
সুরভি ও সৌন্দর্য্য আজ স্ফুরিত হয়েছে এই রৈবতকে।
অর্জুন বাসুদেবের সঙ্গে দর্শকরূপেই ভ্রমণ করতে থাকলেন এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে।
সহসা গতি
স্তব্ধ হয়ে গেল অর্জুনের। সখি পরিবৃতা হয়ে আছে এক অনিন্দ্যসুন্দরী সদ্যযুবতী
কন্যা। বর্ণনাতীত সে সৌন্দর্য্য। তার চলাফেরার মধ্যে এক অনন্য লীলায়িত ছন্দ। তার চরণপদ্মের
প্রতি পদক্ষেপে জ্যোতির্ময় পাদনখকনার রক্তিম আভায় যেন রাশি রাশি স্থলপদ্ম সৃষ্টি
করছে। তার নূপুরনিক্বণের ঝুমঝুম ধ্বনি যেন রাজহংসীর অলস মন্দগতি। তার গুরুভার
নিতম্বের অপূর্ব দোলায়িত ছন্দে চির ব্রহ্মচারীও হয়ে উঠবেন প্রেমোন্মত্ত। নীলকান্ত
মনির আভায় অলংকৃত তার তপ্ত কাঞ্চনবর্ন সুগভীর নাভিমূল। ত্রিবলীরেখার উর্দ্ধে
সু-উন্নত যুগল বক্ষপর্বতের নিবিড় সখ্য সন্নিবেশ, শিরীষ কুসুম অপেক্ষাও কোমল তার
দুই বাহু, কন্ঠের মুক্তাহার যেন কণ্ঠকেই আপন অলংকার মনে করে নিজ শোভা বর্ধন করছে।
পদ্মগিরীশ আর চম্পক একাকার হয়ে সৃষ্টি করেছে তার মুখমণ্ডল। মুক্তা যদিবা কখনও
রক্তাভবর্ণ হত, তবে তার আভার সঙ্গে এই সুন্দরীর অধর-হাস্যের উপমা করা যায়
কিছুমাত্র।কোকিলের কুহুতান তার বীনাবন্দিত স্বরের কাছে পরাভূত। চঞ্চলনেত্রে কখনো
বা সে ত্রস্তা মৃগনয়নী, আবার কখনো বা কমনীয় আয়তাক্ষি, রহস্যাবৃত মহিমময়ী।
পুষ্পধনুর বক্রতা পরাজিত তার ভ্রু-যুগলের কাছে। মেঘবর্ণ চিকুররাশি আকাশে বিভ্রান্ত
করছে মেঘদলকে।
স্থির
নিশ্চল বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন অর্জুন। এই অনিন্দ্যসুন্দরী তরুণীর রূপ, গুন, স্নিগ্ধতা,
যৌবনোচ্ছ্বাস যে এক অত্যাশ্চর্য ঐন্দ্রজালিক আকর্ষণ রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে
মোহাবিষ্ট করে তুলল অর্জুনকে।
ফাল্গুনীর এই প্রস্তরীভূত অবস্থা,
পলকশূণ্য দৃষ্টি – বাসুদেবের নজর
এড়াল না। মৃদু কৌতুকের মায়াজাল রচনা করে সহাস্যে অর্জুনকে বললেন, “অরণ্যাচারী পুরুষের মন সহসা উতলা
কেন?” অর্জুন এবার আত্মসচেতন হলেন,
একটু লজ্জিতও হয়েছেন। তথাপি হৃদয়োচ্ছ্বাস গোপন করলেন না। লজ্জাবিহ্বল কণ্ঠে প্রশ্ন
করলেন, “কে-কে এই কন্যা?”
“এ সুভদ্রা। আমার পিতা বসুদেবের দুহিতা, সারণের
সহোদরা।”
ততক্ষণে
সুভদ্রা দৃষ্টিশক্তির অন্তরাল হয়েছেন। অর্জুনও সচেতন হয়ে উঠলেন। শ্রীকৃষ্ণ কি মনে
করছেন – তা ভেবে লজ্জাবনত হয়ে পড়লেন পার্থ। তথাপি বলে উঠলেন, “সখা ,সত্য বলছি, এমন
অপরূপ সুন্দরী নারী আমি পূর্বে দেখিনি। এ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, একক।” শ্রীকৃষ্ণ ঈষৎ হেসে উত্তর দিলেন, “ হ্যাঁ, আমার এই
ভগ্নীটি প্রকৃতই সুন্দরী ও সর্বগুনান্বিতা।
এত মিষ্টভাষী সেবাপরায়ণা , কোমলপ্রাণা, স্নেহশীলা কন্যা সত্যই দুর্লভ। তুমি যদি ইচ্ছা কর , তবে আমি পিতার সঙ্গে কথা
বলতে পারি।” মুহূর্তকালও অপেক্ষা না করে অর্জুন বলে উঠলেন, “ হ্যাঁ , এ কন্যাকে লাভ না করলে জীবনধারণ নিরর্থক।”
স্মিতহাস্যে
কৃষ্ণ বললেন, “ আমি
সর্বতোভাবে প্রয়াস করব সখা।”
সায়াহ্ণে শয়নকক্ষে
নিভৃতে বাসুদেব বার্তালাপ করছিলেন মহিষী সত্যভামার সঙ্গে। প্রাথমিক
কথোপকথনের পরে বাসুদেব জানালেন সুভদ্রার প্রতি অর্জুনের আকর্ষণের কথা। সহাস্যে
কৃষ্ণমহিষী সত্যভামা বলে উঠলেন, “ তাহলে আপনার বনবাসী
, ব্রহ্মচারী সখার হৃদয়েও মদনদেব শরনিক্ষেপ করলেন?”
“তাইতো প্রতীয়মান
হচ্ছে । সুভদ্রার প্রতি সে প্রেমোন্মত্ত হয়ে উঠেছে। অথচ সুভদ্রার তার প্রতি মনোভাব
তো এখনো অজ্ঞাত। প্রিয়ে, তুমি কৌশলে সুভদ্রার মনোভাব জানবার প্রয়াস কর।”
“নিশ্চয় প্রাণনাথ। যত শীঘ্র সম্ভব
আমি এ বিষয়ে জ্ঞাত হয়ে আপনাকে অবহিত করব।”
সন্ধ্যাকাশে উদিত উত্তরফল্গুনী। জ্যোৎস্নাপিপাসী
চকোর লুটিয়ে পড়েছে কিশোরী সুভদ্রার কক্ষের সমীপে।সহসা কক্ষে প্রবেশ করলেন রাজমহিষী
সত্যভামা।
“ভদ্রা।”
সহসা রাজমহিষীর প্রবেশে আত্মসচেতন হয়ে উঠলেন সুভদ্রা, কিছুটা
বা শশব্যস্তও।বলে উঠলেন , “প্রণিপাত দেবি।”
“আশীর্বাদ নাও। ভদ্রা,
আমি নিভৃতে তোমার সঙ্গে বার্তালাপ করতে চাই।”
“বলুন দেবি।”
কয়েকমুহূর্ত সত্যভামা স্থির
দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করলেন সুভদ্রাকে। অতঃপর
স্মিতহাস্যে বলে উঠলেন, “ভদ্রা তুমি প্রকৃতই অসামান্যা সুন্দরী হয়ে উঠেছ।
কুন্তীনন্দনের আর দোষ কি? এমন কন্যার প্রতি প্রণয়াসক্ত হওয়াই তো স্বাভাবিক।”
অকস্মাৎ সুভদ্রার দুই নেত্র বিস্ময়ের স্পর্শে উৎসুক হয়ে ওঠে।
“ কি বলছেন দেবি?”
“সত্যই বলছি ভদ্রা।
তৃতীয়পাণ্ডব যে তোমার প্রেমে আত্মবিস্মৃত।”
লজ্জায় রক্তিম আভা স্ফুরিত হয়
সুভদ্রার সুমুখশ্রীতে।
“প্রতীয়মান হয়। তুমিও
সমভাবে তার প্রতি অনুরক্তা ভদ্রা।”, বলে ওঠেন সত্যভামা।
স্মিত হাসি উদ্ভাসিত হয় সুভদ্রার
সুকোমল অধরে।
মনোভাব অনুধাবনে অসুবিধা হয় না
সত্যভামার। মুহূর্তে সুভদ্রাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে বলে ওঠেন, “ তোমাদের
প্রণয় সার্থক হোক , ভদ্রা।”
নিশান্তে
ঊষালগ্নে দেবারাধনার উদ্দেশ্যে রৈবতকের মন্দিরে উপস্থিত হলেন সুভদ্রা। আরাধনা
সম্পন্ন হবার পর মন্দির থেকে নিষ্ক্রান্ত হবার সময় অবাক বিস্ময়ে কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে গেল
বৃষ্ণিসুন্দরীর।সম্মুখে দণ্ডায়মান এক কান্তিমান বলদৃপ্ততনু সুপুরুষ। ইনিই পূর্বদিবসে উৎসব প্রাঙ্গণে নির্নিমেষ
নেত্রে তাঁকে নিরীক্ষণ করছিলেন।বুঝতে অসুবিধা হয়না সুভদ্রার – ইনি তৃতীয় পাণ্ডব
অর্জুন।
সুভদ্রার
সম্মুখবর্তী হলেন পার্থ। “নমস্কার দেবি। আমি তৃতীয়পাণ্ডব অর্জুন।” প্রতি নমস্কার
জানালেন সুভদ্রা।
“বিশ্বাস হচ্ছে না
বিম্বোষ্ঠী। এই অনিন্দ্যসুন্দরী রাজকন্যা আমার সম্মুখে।”
নবপরিনয়লজ্জাবিধূরা বধূর মত আরক্তিম
হয়ে ওঠে বৃষ্ণিসুন্দরী সুভদ্রার কপোল। অস্ফুটে বলে ওঠেন, “ আপনি অত্যুক্তি
করছেন আর্যপুত্র।”
“আমি অত্যুক্তি করছি
না সুন্দরী। তোমার অপরিমিত সৌন্দর্য বর্ণনা করার মত ভাষাশক্তি আমার নেই।”
সুভদ্রার লজ্জাবনত বদনে স্ফুরিত হয়
মৃদু হাসির রেখা।ক্ষণিকের জন্য নিরুত্তর থাকেন ফাল্গুনী। অপলক নেত্রে চেয়ে থাকেন
সুভদ্রার প্রতি। অতঃপর বলে ওঠেন, “ আমি সম্পূর্ণরূপে
তোমার প্রণয়াসক্ত চারুসর্বাঙ্গী। প্রণয়দানে ধন্য কর আমার জীবন।”
“এ আপনি কি বলছেন আর্যপুত্র?”
“সত্যই বলছি সুন্দরী।
তোমা বিনা অপূর্ণ এই আর্যাবর্তের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর।”
“আপনি যদি প্রকৃতই
আমার প্রণয়াসক্ত হয়ে থাকেন তবে প্রথাগতভাবে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার প্রয়াস করুন
আর্যপুত্র।”
অধর
সুস্মিত হয়ে ওঠে ফাল্গুনীর। আজ তাঁর চিরঈপ্সিতা নারীর নিকট থেকে লাভ করেছেন
আন্তরিক প্রেমের আশ্বাস। চিত্ত অসংযত হয়ে ওঠে। সহসা দৃঢ় আলিঙ্গনপাশে আবদ্ধ করে
ফেলেন সুভদ্রাকে। মৃদুস্বন শঙ্খের অস্ফুট নিঃশ্বাস ধ্বনির মত নারীর কর্ণকুহরের
সন্নিকটে অধর এগিয়ে আহ্বান করেন, “ প্রিয়া জীবন সার্থক করলে তুমি।”
“সংযত হোন
আর্যপুত্র। নিকটের আমার সখীরা আছে।” মৃদু প্রতিবাদ ধ্বনিত
হয় ভদ্রার কণ্ঠে। আলিঙ্গনপাশ থেকে মুক্ত করেন পার্থ।
“ ক্ষমা কর প্রিয়া।
তোমার প্রেমে আত্মসংযম হারিয়েছি।”
“ আজ আমায় বিদায় দিন আর্যপুত্র। নতুবা বিলম্ব হয়ে
যাবে।”
“পুনরায় তোমার সাক্ষাতের অপেক্ষায় থাকব প্রিয়া।”
স্মিতহাস্যে
ধীর পদক্ষেপে প্রস্থান করে সুভদ্রা।
এদিকে
মহামতি কৃষ্ণ অর্জুন ও সুভদ্রার বিবাহ বিষয়ে আলোচনায় প্রয়াসী হয়ে ওঠেন পিতা বসুদেব
ও অগ্রজ বলরামের সঙ্গে। কিন্তু বহুগুণের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অর্জুনকে পাত্ররূপে
স্বীকার করতে সম্মত হলেন না বসুদেব ও বলরাম। কারন অর্জুন রাজা নন; রাজভ্রাতা।
উপরন্তু গৃহে দ্রৌপদীর মত প্রবলা সপত্নী বিদ্যমান।
সায়াহ্ণে
ধীর পদক্ষেপে অর্জুনের কক্ষে প্রবেশ করলেন শ্রীকৃষ্ণ। অধীর প্রতীক্ষায় অপেক্ষারত
পার্থ কৃষ্ণকে দর্শনমাত্র আসন পরিত্যাগ করে উত্থিত হলেন। বলে উঠলেন, “ গুরুজনদের সঙ্গে আলোচনা হল সখা?”
“শান্ত হও পার্থ।”, নির্মোহ কণ্ঠে বললেন শ্রীকৃষ্ণ।
ক্ষণকাল নিশ্চুপ থেকে আবারও বললেন, “পিতা বসুদেব ও অগ্রজ
বলরাম উভয়ই তোমাকে সুভদ্রাকে সমর্পণ করতে অসম্মত। কারন, শতগুণের অধিকারী হলেও তুমি
রাজা নও; রাজভ্রাতা।”
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট
হয়ে গেলেন অর্জুন। বেদনাবিধূর কণ্ঠে বলে উঠলেন, “তাহলে
উপায় কি মধুসূদন?” মৃদু হাসির রেখা স্ফুরিত হয় বাসুদেবের অধরে। বলে
উঠলেন, “ক্ষত্রিয়স্বরূপ আচরণ
কর পার্থ। ভূমির ন্যায় স্ত্রীলোকও বীরভোগ্যা। তোমার প্রেমাগ্নি যদি প্রকৃতই
দাবানলসদৃশ প্রবল হয়ে থাকে তাহলে সুভদ্রাকে তুমি হরণ কর।”
প্রাথমিক বিহ্বলতা দূর করে কিছুটা
আশ্বস্ত হলেন অর্জুন। শ্রীকৃষ্ণ আরও বললেন,“ শুভস্য শীঘ্রম্, পার্থ। আগামীকাল প্রত্যুষে সুভদ্রা
যখন দেবালয়ে পূজার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হবে; সেই সময়েই তুমি হরণ কর সুভদ্রাকে।”
পরদিন প্রভাতে প্রত্যাশা মতোই রৈবতক পর্বতে দেবালয়ে
দেবারাধনা সমাপন করে মন্দির থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন সুভদ্রা। আর ঠিক সেই সময়েই
সবেগে রথ নিয়ে উপস্থিত হলেন অর্জুন। সপৌরুষ আলিঙ্গনে সুভদ্রাকে তুলে নিলেন নিজের
কাঞ্চনরথে। স্বর্ণখচিত রথে তাঁর পরম ঈপ্সিতা নারীকে নিয়ে ফাল্গুনী ছুটে চললেন ইন্দ্রপ্রস্থের
দিকে।
এদিকে
সুভদ্রাহরণের সংবাদ দ্বারকায় পৌঁছানো-মাত্র ক্রোধোন্মত্ত হয়ে উঠলেন যাদববৃন্দ।
হলধর বলরাম তৎক্ষণাৎ পরিকল্পনা করলেন অর্জুনের পশ্চাদ্ধাবন করবার। ঠিক এই সময়
পরিস্থিতির রাশ নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হলেন বাসুদেব কৃষ্ণ। বোঝালেন যে অর্জুনের বংশগৌরব, শিক্ষা, শৌর্য,
অস্ত্রকুশলতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, বিনয় সমগ্র ভারত ভূখণ্ডের আদর্শ। আর বিবাহার্থে
কন্যাহরন ক্ষত্রিয়ের ক্ষেত্রে শাস্ত্রসম্মত। সর্বোপরি অর্জুন-সুভদ্রা পরস্পরের
প্রতি প্রণয়াসক্ত। এখন যদি যাদববৃন্দ অর্জুনের সঙ্গে সংগ্রামে পরাজিত হন তাহলে
যাদবকুলের মানসম্মান কিছুমাত্র অবশিষ্ট থাকবে না। বরং এই মুহূর্তে উচিত সুভদ্রা ও
অর্জুনকে ফিরিয়ে এনে – উভয়ের বিধিপূর্বক বিবাহের ব্যবস্থা করা।
বলরাম
ও অন্যান্য যাদববৃন্দ কৃষ্ণের কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করলেন। আনয়ন করা হল অর্জুন
সুভদ্রাকে। শুভলগ্নে সম্পন্ন হল অর্জুন ও সুভদ্রার পরিণয়। পূর্ণ হল সুভদ্রা
অর্জুনের প্রেম।
___________________ সমাপ্ত __________________
খুব সুন্দর। নমস্কার বন্ধু। নমস্কার!
ReplyDeleteMany many thanks.
Deleteখুব সুন্দর। নমস্কার বন্ধু। নমস্কার!
ReplyDelete