Sunday, 24 May 2015

স্মরণঃ সুকুমারী ভট্টাচার্য(১৯২১-২০১৪)

স্মরণঃ সুকুমারী ভট্টাচার্য(১৯২১-২০১৪)
                                                                
                                                                                             -শুভ্রজিৎ রায়
                            
                        আজ ২৪-এ মে। ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ভারতবেত্তাদের  অগ্রগন্য সুকুমারী ভট্টাচার্য ; তাঁর অসংখ্য গুনমুগ্ধ অনুরাগীদের প্রিয় সুকুমারীদি। তিনি ছিলেন অতি সীমিত সেই প্রাজ্ঞ পণ্ডিতদের একজন যাঁদের সংস্কৃত ও ইংরাজি উভয় বিষয়ের উপরই অগাধ পাণ্ডিত্য। তাঁর রচিত ৩৫ টির ও বেশি বই স্বদেশে ও বুহির্ভারতে সমাদৃত ও সুপ্রশংসিত। লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপিকা হিসাবে পেশাজীবনে প্রবেশ তাঁর। তারপর যাদপপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে বিভাগে কিছুদিন অধ্যপনা করবার পর বাকি সময় সেখানেই সংস্কৃত বিভাগে।
                             সুকুমারী ভট্টাচার্য-র জন্ম ১৯২১ এর ১২ই জুলাই এক খ্রিস্টান পরিবারে। তার এই পারিবারিক বংশপরিচয় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় খ্রিস্টান হবার অপরাধে তাঁকে সংস্কৃত সাহিত্যে স্নাতকোত্তর  পাঠ অনুমোদন করল না। বাধ্য হয়ে এম. এ করলেন ইংরাজী সাহিত্যে। কিন্তু হাল ছাড়েননি সুকুমারী দেবী। ১০ বছর পর প্রাইভেট পরিক্ষার্থী হিসেবে সংস্কৃতে এম.এ করলেন তিনি।এখানেই সমাপ্তি নয়।  বিদ্যাচর্চার প্রক্রিয়ায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন পালি, প্রাকৃত, ফরাসি ও জার্মান ভাষায়। সমগ্র জীবন জুড়ে তাঁর জ্ঞানচর্চার বিস্তৃতক্ষেত্র ছিল বেদ-উপনিষদ, রামায়ণ-মহাভারত থেকে শুরু করে পুরাণ ও বৌদ্ধ সংস্কৃত সাহিত্য। নিজে তিনি ছিলেন নিরীশ্বরবাদী। অথচ তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব। বিজ্ঞানসম্মত ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন সমাজ সংস্কৃতি ও সাহিত্যের স্পষ্ট ও সহজ ভঙ্গিমায় মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে। এছাড়া নারীপ্রগতির স্বপক্ষে, জাতিভেদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলা ও ইংরাজিতে রচনা করেছেন বহুসংখ্যক প্রবন্ধ ও নিবন্ধ।
                        অনুমিত হয় তাঁর স্বামী , ইংরাজি সাহিত্যের প্রথিতযশা অধ্যাপক অমল ভট্টাচার্যের সূত্রেই তাঁর পরিচয় হয় মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ এর সঙ্গে। ভারতের কমিউনস্ট আন্দোলনের একনিষ্ঠ দরদি সমর্থক ছিলেন আমরন। বামপন্থী নীতিনিষ্ঠতা তাঁকে চির অবিচল রেখে ছিল নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যে।
                        ইহলোকে তিনি আজ আর নেই। কিন্তু তিনি চিরজীবী থাকবেন আমাদের হৃদয়ে- তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে। কারন , মৃত্যু তো সব কিছু ছিনিয়ে নিতে পারে না।

মৃত্যু কি সকলই নেয়? মৃত্যু কি সকলই নিতে পারে?"

No comments:

Post a Comment

ধর্ম, সমাজ ও নারী

-শুভ্রজিৎ রায় “ তার (নারীর) বুদ্ধি, তার সংস্কার, তার আচরণ নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার দ্বারা বহু যুগ থেকে প্রভাবান্বিত। তার শিক্ষা, তার...